শনিবার, ৪ জুন, ২০১১

প্রাচীন ভারতীয় নাস্তিক্যবাদ

আমরা অনেকেই মনে করি যে নাস্তিক্যবাদ বা নিরীশ্বরবাদ হল একটি আধুনিক মতবাদ। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এই মতবাদ তেমন নতুন কিছু নয়। আজ থেকে প্রায় ২৫০০ বছর আগেও আমাদের উপমহাদেশেই এই নাস্তিক্য মতবাদ ছিল যা আমরা অনেকেই জানি না।


আমরা জানি, নাস্তিক শব্দটির অর্থ হল যে ঈশ্বরে বিশ্বাস করে না। বৈদিক সাহিত্য অবশ্য নাস্তিক শব্দএর একটু অন্য ধরণের বিস্তৃত অর্থ তৈরি করেছে। যথা-

১. যে বেদ মানে না।
২. যে বেদকে অপৌরুষেয় অর্থাৎ ঈশ্বর সৃষ্ট মনে করে না।
৩. যে বেদকে অভ্রান্ত মনে করে না,
৪. যে দেশাচার মানে না,
৫. যে পরলোকে বিশ্বাস করে না।
৬. যে ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না।


বৈদিক সাহিত্যে ছ'টি শ্রেণীর নাস্তিকের কথা বলা হয়েছে। যথা - ১. মাধ্যমিক, ২. যোগাচার, ৩. সৌত্রান্তিক, ৪. বৈভাষিক, ৫. চার্বাক ও ৬. দিগম্বর।


প্রাচীন ভারতঈয় নাস্তিক্যবাদী দর্শন নিয়ে আলোচনার আগে আমরা এই বৈদিক সাহিত্য দ্বারা সংজ্ঞায়িত ৬ শ্রেণীর নাস্তিকদের নিয়ে ছোট্ট করে কিছু আলোচনা সেরে নেই।


১. মাধ্যমিক
নাগার্জুন মাধ্যমিক মতবাদের প্রবক্রা। এটি একটি মহাযানপন্থী বৌদ্ধ দর্শন। মাধ্যমিক মতে- আমরা যা দেখি, যা অনুভব করি, সবই আপেক্ষিক ভাবে মনে হওয়া, অনুভব করা। আলোয় যে প্রকৃতিকে আমরা দেখতে পাই, অন্ধকারে তা দেখা যায় না। চোখ না থাকলে জগতের বস্তু, রঙ সবই মিথ্যা। যে দ্রব্য একজন দুর্বল দ্বারা পরীক্ষিত হলে কঠিন মনে হয়, তাই একজন সবলের কাছে কম কঠিন অনে হয়। গুণাবলী স্বয়ং অস্তিত্ববান হতে পারে না। যে খাদ্যবস্তুর স্বাদ একজনের কাছে উপাদেয়, অপরের কাছে খারাপ মনে হতে পারে। সুতরাং বস্তুর বাস্তব গুণ নেই। বস্তুগুণ আপেক্ষিক।


একটি বস্তুর মধ্যে একই সঙ্গে সৃষ্টি-স্থিতি-লয় থাকতে পারে না। জগতের প্রকৃত কোনও অস্তিত্ব নেই। বস্তুসমূহ চীরস্থায়ীও নয়, ক্ষণস্থায়ীও নয়। বস্তু উৎপন্নও হয় না, বিলুপ্তও হয় না। আমরা যে সব বস্তু দেখছি তা আসলে অলীক।


মাধ্যমিক দর্শন কিছু যুক্তি ও কিছু যুক্তিহীনতায় ভরা দর্শন। বৈদিক যুগের ধর্মগুরুরা মাধমিক দর্শনের যুক্তিমনস্কতাকে ভয় পেয়েছিলেন। তারই পরিণতিতে মাধ্যমিকদের একঘরে করার চেষ্টায় মেতেছিলেন। প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এমন কিছু গভীর ও সূক্ষ্ম চিন্তার মানুষ ছিলেন- ভাবলে বিষ্ময় জাগে।



২. যোগাচার
গাচারযোগাচারও একটি মহাযান বৌদ্ধ দর্শন। যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদ এর মতে - চৈতন্য, চেতনা, জ্ঞান ও বিজ্ঞান নিজে থেকেই ক্রিয়াশীল। বাইরের কোনও শক্তির দ্বারাই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি।


যোগাচার দর্শনে এমন বিজ্ঞানমনষ্ক চিন্তার পাশাপাশি কিছু ভ্রান্তিও ছিল। যোগাচারীরা মাধ্যমিকদের মতই মনে করতেন - যেহেতু চৈতন্য ছাড়া আমরা কোনও কিছুই দেখতে পারিনা, জানতে পারি না, তাই দৃশ্যমান কোন বস্তুর বাস্তব অস্তিত্ব নেই।



৩. সৌত্রান্তিক
সৌত্রান্তিকপন্থীরা নিরীশ্বরবাদী। তাঁরা মনে করেন, ঈশ্বর নেই। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড, প্রকৃতির কোনও কিছুই ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়। সব কাজের পিছনেই থাকে কারনের বিবর্তনমূলক প্রকৃয়া। মাটিতে বীজ পুঁতলে অংকুর হয়। অংকুর থেকে শিশু গাছ, কাণ্ড-শাখা-প্রশাখা-পাতা-ফুল-ফল সবই একটা কারনের বিবর্তনমূলক প্রকৃয়া। সৃষ্টি স্থান-কাল নির্ভর। একটা বীজকে মাটিতে বপন না করে মাটি বা ধাতুর পাত্রে রেখে দিলে মাটি ও জলের অভাবে বীজ থেকে অঙ্কুর সৃষ্টি হবে না। মৈথুএর এক পক্ষের মধ্যে জন্মও নেবে না একজন শিশু। নারি-পুরুষের মিলন থেকে সকল শিশুর জন্মানোর যে বিবর্তন প্রক্রিয়া,তার জন্য একটা নির্দিষ্ট কালের প্রয়োজন। ঈশ্বর এই স্থান-কালের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে সৃষ্টি করতে পারে না। সৌত্রান্তিক্রা শুধুমাত্র প্রত্যক্ষ প্রমাণকে গ্রহণ করতেন না।অভিজ্ঞতার সঙ্গে প্রত্যক্ষপ্রমাণকে মিলিয়ে বিচার করলে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায় বলে মনে করতেন। হীনযানী বৌদ্ধদেরই একটি সম্প্রদায়ের নাম হল সৌত্রান্তিক।



৪. বৈভাষিক
হীনযানী বৌদ্ধদেরই আরও একটি শাখা বৈভাষিক। বৈভাষিকদের মতে গৌতম বুদ্ধ বৌদ্ধত্ব প্রাপ্তির পর যে'সব উপদেশ দিয়েছিলেন, সেগুলি নিয়েই সাতটি অভিধর্ম গ্রন্থ। এই অভিধর্ম গ্রন্থই বৌদ্ধদর্শনের প্রামাণ্য উৎসগ্রন্থ।


বৈভাষিকরা প্রত্যক্ষপ্রমাণকে শ্রেষ্ঠ মনে করতেন। মনে করতেন সমস্ত বস্তু চারটি ভূত দ্বারা গঠিত। এরা হল, পৃথিবী, জল, অগ্নি ও বায়ু। বৈভাষিকরা ন্যায়বৈশেষিকদের পারমাণবিক তত্ত্বকে স্বীকার করতেন।


বৈভাষিক দর্শনে বলা হয়েছে, পরমাণুর ছয়টি কোণ আছে। বস্তুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র, অবিভাজ্য বিশ্লেষণ অযোগ্য অ অস্থির চরিত্র হল পরমাণুর গুণ। এককভাবে অদৃষ্য হলেও সমষ্টিগতভাবে দৃশ্যমান।


বৈভাষিকরা নিরীশ্বরবাদী। এমন নিরীশ্বরবাদীদের পরবর্তী জন্মও শেয়াল যোনিতে হবে বলে বৈদিক পূজারীরা গালি দিলেও, সেটা আদৌ অস্বাভাবিক ঠেকে না। বাঁচোয়া- শকুনের অভিশাপে গরু মরে না।



৫. চার্বাক
চার্বাক দর্শন একটু বৃহৎ আলোচনার প্রয়োজন আছে বলে সেটাকে এখানে আলোচিত না করে আলাদাভাবে আলোচিত করা হয়েছে। চার্বাক মতবাদ সম্পর্কে জানতে নিচের নিবন্ধগুলো পড়তে পারেন-

চার্বাক মতবাদ - ১ - http://www.facebook.com/note.php?note_id=10150209618089561
চার্বাক মতবাদ - ২ - http://www.facebook.com/note.php?note_id=10150212369704561
অথবা,
চার্বাক মতবাদ - http://sumitroydipto.blogspot.com/2011/06/blog-post_03.html



৬. দিগম্বর
মহাবীরের দিগম্বর মতবাদ সম্পর্কেও আলাদাভাবে আলোচনা করা হয়েছে। নিচে উল্লিখিত নিবন্ধটি দেখুন-

মহাবিরের দিগম্বর মতবাদ - http://www.facebook.com/note.php?note_id=10150219224724561
অথবা,
মহাবিরের দিগম্বর মতবাদ - http://sumitroydipto.blogspot.com/2011/06/blog-post_04.html



এতক্ষন যেসব নাস্তিক্যবাদী মতবাদ বৈদিক সাহিত্যে উল্লিখিত হয়েছে সেসব মতবাদ নিয়ে আলোচনা করলাম। এখন অন্যান্য মতবাদগুলো নিয়ে আলোচনা করব। তার আগে কিছু গুরুত্বপুর্ণ কথা বলে রাখি। প্রাচীন ভারতীয় দর্শন বলতে যে চিন্তাধারা বোঝায়, তা প্রধানত নিরিশ্বরবাদী। কথাটা একটু নতুন শোনালেও এটাই সত্যি, একশো শতাংশ সত্যি।


আমরা খবরের কাগজ পড়ে ততটাই জানতে পারি যেটুকু ছাপানো হয়, চাপা খবর আমরা পাই না। ঠিক তেমনই বেশির ভাগ ভারতীয় দার্শনিক প্রাচীন ভারতীয় দর্শন সম্পর্কে যতটা ছেপেছেন, তার চেয়ে বেশি চেপেছেন।


ম্যাক্সমুলার থেকে রাধাকৃষ্ণ, ভারতীয় দর্শনের গবেষক থেকে প্রামাণ্য দার্শণিকেরা বলতে চেয়েছেন, হিন্দু ধর্ম মূলত একেশ্বরবাদী। তারা দেখাতে চেয়েছেন, বেদের দেবতারা ভিন্ন ভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির প্রতিনিধি বা প্রতীক। পরবর্তিকালে বেদ বিশ্বাসী মানুষরা বুঝেছিলেন, সমস্ত শক্তির উৎস এক। তিনিই পরম ব্রহ্ম, ব্রহ্মাণ্ডের সব কিছুর নিয়ন্তা।


এইসব ভারত বিশেষজ্ঞ, পণ্ডিত, দার্শনিকেরা ব্রিটিশ শাসনের অধীনে, ব্রিটিশ শক্তির পরিমণ্ডলে পরিপক্ক হওয়ার ফলে খ্রিষ্টীয় একেশ্বরবাদের সাংস্কৃতিক শাসনকে মেনে নিয়েছিলেন। বৈদিক ধর্মের যাগযজ্ঞ সর্বস্বতাকে, বহু ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাসকে, খ্রিস্ট্রীয় একেশ্বরবাদের তুলনায় হীন বলে মনে করেছিলেন। ফলে বৈদিক ধর্মকে মূলত একেশ্বরবাদী বলে প্রচার করতে চেয়েছিলেন। আর এই চাওয়াকে সার্থক করতে এইসব তথাকথিত পণ্ডিতেরা ইতিহাস বিকৃত করতে চেষ্টার কসুর করেননি।


মুশকিল হল, বৈদিক সাহিত্য একেশ্বরবাদী তো নয়-ই, এমনকী ঈশ্বরকে সমস্ত কিছুর নিয়ন্তা বলে মনে করে না। বেদ দ্বিধাহীন ভাবে মনে করে, যে কারণে যজ্ঞ করা হবে, সে ফল মিলবেই। ঈশ্বরের ক্ষমতা নেই এই ফল লাভ আটকে দেবার। ক্ষমতা নেই ফল দেবার। যজ্ঞই একমাত্র সত্য। দেবতার ভুমিকা শুণ্য। বেদে যজ্ঞের ভূমিকার প্রাধান্য দেবার একটা বিশেষ কারনও আছে বটে। সবাই যদি মনে করে যে সকল অভিষ্টপূরণকারী হল দেবতা আর সেই দেবতাকেই উপাসনা করায় সবাই ব্যাস্ত হয়ে পরে তাহলে ব্রাহ্মণদের পেট কী করে চলবে? কারণ তখনকার সময় ব্রাহ্মণদের জীবিকাই ছিল এইসব যাজ্ঞের উপর নির্ভরশীল। তাই নিজেদের পেট চালানোর জন্য ব্রাহ্মণেরা বেদে যজ্ঞের বিধান দেন এবং দেবতাদের ভূমিকাকে কমিয়ে দিয়ে নিজেদের জীবিকা নিশ্চিত করেন। পাঠকগণ, আশা করি ইতিমধ্যে আপনারা সকলে বুঝে গেছেন যে ধর্মগুরুদের ধ্যানলব্ধ জ্ঞানের দ্বারা নয় বরং ধর্মগুরুদের পেটের তাগিদেই পরিকল্পিতভাবে হিন্দুধর্মের উৎপত্তি হয়েছিল আর তারপর বিভিন্নভাবে সমাজকে আয়ত্তে আনার চেষ্টায় এই হয়েছে এই ধর্মের বিবর্তন।


যাইহোক এখন মূল আলোচনায় আসি। বেদে অনুল্লিখিত প্রাচীন ভারতের নিরীশ্বরবাদী মতবাদগুলো সম্পর্কে নিম্নে উল্লেখ করা হল -



সাংখ্য
সাংখ্য দর্শনকে ভারতের প্রাচীনতম দর্শন বলে মনে করেন ভারতীয় দার্শনিকরা। সাংখ্য দর্শন নিরিশ্বরবাদী দর্শন। এখানেই শেষ নয়। সাংখ্য দর্শন মূলত বস্তুবাদী দর্শন। সাংখ্য যে একটি প্রাচীন মতবাদ, তার প্রমাণ- উপনিষদ সমূহে ও মহাভারতে সাংখ্য দর্শনের উল্লেখ আছে। গৌতম বুদ্ধ গৃহত্যাগের পর সাংখ্য অধ্যয়ন করেছিলেন বলে মনে করা হয়। কারণ সাংখ্য দার্শনিক কপিল ছিলেন বুদ্ধের উত্তরসুরী এবং বৌদ্ধ ধর্মের উপর সাংখ্যের প্রভাব স্পষ্ট।


কপিল তার সাংখ্যে ব্রহ্ম বা পরমাত্মাকে কোনও স্থান দেননি। তার মতে প্রকৃতি নিত্য, সমস্ত জাগতিক পদার্থ তারই পরিবর্তনের ফলে উৎপন্ন।


সাংখ্য মনে করে- জড় প্রকৃতির বিবর্তনের মধ্য দিয়েই বিশ্বের সব কিছুর সৃষ্টি। প্রতিটি কাজ বা ঘতনার পিছনেই রয়েছে কারণ। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ সাংখ্য-সংস্থাপক কপিলকে ঋষি বলে শ্রদ্ধা জানিয়েছিল। নিরীশ্বরবাদী কপিল মুনি হিন্দু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কাছে ঈশ্বরের পরমভক্ত মুনি হিসেবে পুজিত হচ্ছেন- এটাই দুঃখ। ইতিহাস বিকৃতিকে দেখার দুঃখ। প্রচারের দৌলতে বিকৃতিকারীদের আলোকিত হতে দেখার দুঃখ।



মীমাংসা
ভারতবর্ষের আরও একটি প্রাচীন ও অত্যন্ত শক্তিশালী দর্শন হল মীমাংসা। মীমাংসাবাদীরা স্পষ্টতই নিরীশ্বরবাদী। মীমাংসক কুমারিল ভট্টের রচিত শ্লোকবাতিক থেকে মীমাংসা দর্শনের কিছু মতামত তুলে ধরছি-


১. কেউ যদি বলেন এই বিষ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির আগে থেকেই ঈশ্বর ছিলেন, তবে তাকে প্রশ্ন করা যেতে পারে সৃষ্টি না থাকলে স্থান থাকে না। স্থান না থাকলে ইশ্বর কোন স্থানে থাকতেন?


২. ঈশ্বর নিরাকার ছিলেন, নাকি তার আকার ছিল, দেহ ছিল? দেহ থাকলে সেই দেহের নিশ্চই একজন স্রষ্টা ছিলেন?


৩. ঈশ্বর সৃষ্টির জন্য নিশ্চই আর একজন ঈশ্বরের প্রয়োজন হয়েছিল। সেই ঈশ্বরকে সৃষ্টি করতে আরও একজন ঈশ্বরের প্রয়োজন হয়েছিল। এভাবে অনন্ত ঈশ্বরের প্রয়োজন হতেই থাকবে।


৪. কোন উপাদান দিয়ে তিনি বিশ্ব সৃষ্টি করেছিলেন? সেই উপাদানগুলো কি সৃষ্টির আগে থেকেই বর্তমান ছিল? থাকলে সেগুলো কোথায় ছিল?


৫. সৃষ্টির উপাদান গুলোর স্রষ্টা কে?


৬. যদি ঈশ্বর তার দেহ থেকেই এই উপাদান তৈরি করে থাকে- তবুও প্রশ্ন থেকে যায় সেই দেহের স্রষ্টা কে? স্রষ্টা হিসেবে একের পর এক ঈশ্বর আনলেও এর উত্তর পাওয়া যাবে না।


৭. ইশ্বর কেন জগৎ সৃষ্টি করলেন? কী অভাববোধ থেকে এই সৃষ্টি? ঈশ্বরের অভাববোধ থাকার অর্থ তিনি পূর্ণ নন।


৮. এই সৃষ্টিকে ঈশ্বরের লীলা বললে, বলতেই হয় ঈশ্বর দায়িত্বজ্ঞানহীন।


৯. ঈশ্বর যদি করুণা থেকে জগৎ সৃষ্টি করে থাকেন, তাহলে জগতে কেন এত দুঃখ?


১০. বেদ এ'কথাই বলে যে, বাঞ্ছিত ফল পেতে যজ্ঞই একমাত্র সত্য, দেবতার কোনও ভূমিকা নেই। দেবতা ফল দিতেও পারে না, ফল লাভ বন্ধও করতে পারে না। বোইদিক যজ্ঞ নীত 'ব্রাহ্মণ' তার প্রমাণ। তাহলে দেবতা বা ঈশ্বর সর্বশক্তিমান নন।


পাঠকেরা, আমার মনে হয় উপরে যা যা বললাম তাতে মীমাংসা দর্শন তদকালীন ব্রাহ্মণ্যবাদী দলের কাছে কী ভয়ানক চীজ ছিল সে বিষয়ে আপনাদের বুঝতে আর বাকি নেই। ঈশ্বর বিশ্বাসীদের বিরুদ্ধে এমন ভয়ংকর আক্রমণ আর কোনও দর্শনই হানতে পারেনি। সত্যি বলতে কী, এ'যুগের উচ্চডিগ্রিধারী অনেকের চেয়ে অনেক বেশি বুদ্ধিদীপ্ত ছিলেন মীমাংসাবাদীরা। মজার কথা হল, প্রচারের আলোয় আলোকিত বিখ্যাত পণ্ডিতদের শেষ পর্যন্ত স্বীকার করতে হয়েছে যে, সাংখ্য এবং মীমাংসা নিরীশ্বরবাদী মতবাদ ও মূলত বস্তুবাদী মতবাদ।



স্বভাববাদ
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের যুগে আরও একটি যুক্তিমনষ্ক মতবাদ উঠে এসেছিল। মতবাদটির নাম স্বভাববাদ। স্বভাববাদের উল্লেখ আমরা পাই মহাভারতে, বৌদ্ধ লংকাবতার সূত্রে ও অশ্বঘোষের বুদ্ধ চরিত-এ। স্বভাববাদ স্পষ্টতই একটি যুক্তিমনষ্ক মতবাদ। এই মতবাদ অনুসারে-

১. বিষ্বপ্রকৃতি কার্য-কারণের নিয়মশৃঙ্খলে বাঁধা।
২. একটি বিশেষ ধরণের ঘটনার পেছনে একটি বিশেষ ধরণের কারণ থাকে। যেমন, মাটি থেকে মৃতপাত্র-ই হত পারে, পরিধেও বস্ত্র নয়।
৩. কারণহীন বা অতিপ্রাকৃত ঘটনা ঘটা সম্ভব নয়।
স্বভাববাদীরা ছিলেন অতিপ্রাকৃতে অবিশ্বাসী, নিরীশ্বরবাদী।



বৌদ্ধ মতবাদ
বোউদ্ধ মতবাদ নিয়ে লিখতে গেলে প্রাসংগিক অনেক কিছুই লিখতে হয়। তাই আয়তনের বিশালতার কারণে আলাদাভাবে বৌদ্ধ মতবাদ নিয়ে লেখা হল। নিচে নিবন্ধটির লিঙ্ক দেয়া হল-

বৌদ্ধ মতবাদ - ১ - http://www.facebook.com/note.php?note_id=10150206453329561
বৌদ্ধ মতবাদ - ২ - http://www.facebook.com/note.php?note_id=10150206465459561
অথবা,
বৌদ্ধ মতবাদ - http://sumitroydipto.blogspot.com/2011/06/blog-post_4264.html





1 টি মন্তব্য:

  1. কর্ম মীমাংসা দর্শন তো মূলত বৈদিক দর্শনই ছিল এর মাধ্যমে বেদান্ত আর এছাড়াও বহু অন্যান্য দর্শন এর ভিত্তি রচিত হয়। এটা একেবারে নিরীশ্বর বাদী দর্শন ছিল না এটা মূলত যাজ্ঞিক মতবাদ এবং নাতাশ্যেয় সুক্তা এর দর্শন থেকে জন্ম নেয়। এটা একটু লক্ষ্য রাখবেন

    উত্তরমুছুন