শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০০৯
পূর্ব-পশ্চিম
পশ্চিমের সৌন্দর্য বড় মোহময়, কারণ তার পেছনে আছে সর্বনাশের বর্ণময় আভা। সেদিকে তাকালে আর চোখ ফেরানো যায় না। পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণেরও দুইটি ভাগ, তার মধ্যে পশ্চিম টানছে পূর্বকে। এক সময় গোটা প্রাচ্যের পশ্চিম সীমা ছিল রোম সাম্রাজ্য। কি দারুন দীপ্তি ছিল তার। যতই উচ্চ শিখরে উঠেছিল রোম ততই ধ্বংসের বিকিরণ চোখ ধাদিয়ে দিছিল। ঠিক যেন সূর্যাস্তের বর্ণচ্ছটা। টাইম ইউ ওল্ড জিপ্সি ম্যান। সময় কোন রাজনীতিতে বেশি দিন টিকে থাকে না। এইতো কিছুদিন আগেই ইতিহাসের মাত্রা ছিল পূর্ব দিকে। আলেকজান্ডার, আট্টিলা দা হান(হুন), মেগাস্থিনিস, ম্যাগেলান, কলম্বাস, ভাস্কো ডা গামা। যত পূর্বে যাওয়া যায় ততই সম্পদের সন্ধান পাওয়া যায়। শুধু সোনাদানা নয়, পরমার্থিকও। হঠাৎ করে যেন শুরু হয়ে গেল উল্টোদিকে প্রবাহ। আবার পূর্ব থেকে পশ্চিমে ফেরা। বারুদ আবিষ্কার করেছে চীন। কিন্তু কামান গর্জনের প্রতাপ ঘোষিত হল প্রতীচ্যে। শুধু ঐহিক সুখ সমৃদ্ধি নয়। একটা মুক্ত জীবনের স্বপ্নময় ছবিও ঝলসে উঠল সেখানে। শুধু স্বাধীনতা নয়, তার চেয়েও একটি অশ্রুতপূর্ব ধারণা ব্যক্তি স্বাধীনতা। যৌবনের জলতরঙ্গ ধাইছে পশ্চিম থেকে পূর্বে। বহু আশা, আকাঙ্খা, স্বপ্ন সব ধাইছে পশ্চিমে। প্রাচ্যের সব মানুষেরা সব আধীর হয়ে চেয়ে আছে কবে তারা পশ্চিমে যাবার সূযোগ পাবে। পাসপোর্ট, ভিসা, স্পনসরশীপ, চাকরী, কলেজ এডমিশন, গ্রীনকার্ড। একটা কিছু পেলেই মোক্ষ মিলে যাবে, অন্তত সমস্যা জর্জরিত বহু সমস্যা থেকে মুক্তি..... প্রাচীন ইজিপশিয়ান সাম্রাজ্যের গৌ্রব সাতাশশো বছর ধরে। বাইজানটাইন সভ্যতা একহাজার বছর, অটোম্যান এম্পায়ার পাঁচশো বছর। পশ্চিমের ধনতন্ত্র আর কতদিন? আবার কি কোনদিন সময় নামের যাযাবরটি পশ্চিম থেকে পূর্বে গিয়ে তাবু গাড়বে? তার আগে বুদবুদের মত শেষ হয়ে যাবে নাতো এই ছোট্ট পৃথিবী? মহাশূন্যে মানুষ পাড়ি দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীটা ছোট হয়ে গেছে। তাই বুঝি এর প্রতি আর বড় বড় রাষ্ট্র নায়কদের আর মায়া নেই? তারা কি ভাবছে এখানে কয়েকটি এ্যাটোম-হাইদ্রোজেন বোমা ফেলে দিয়ে এত বেশি জনতার ভিড় থেকে মুক্তি পেয়ে তাঁরা চাঁদে কিম্বা মঙ্গল গ্রহে গিয়ে বসতি স্থাপন করবে? সেখানেও পূর্ব পশ্চিম থাকবে। এমনকি এই সূর্যের আওতা থেকে ছিটকে গিয়ে ওন্য কোন গ্রহমণ্ডলীর মধ্যে নতুন উপনিবেশ গড়লেও মানুষের পূর্ব পশ্চিম থেকে নিষ্কৃতি নেই।
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)